শীর্ষ খবরহাওড়া

৪৭তম জাতীয় যোগা প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ান হলো হাওড়ার সনত পাখিরা

সৌমেন আদক, হাওড়া: ৪৭তম জাতীয় যোগা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হলেন হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া ১নম্বর ব্লকের অন্তর্গত হাটগাছা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সনত পাখিরা। রাজস্থানের পালির লাখোটিয়া গার্ডেনে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে যোগাশনের জাতীয় প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। সেখানেই চ্যাম্পিয়ন হন সনত। সাধারণ জেলে পরিবারের সদস্য সনত। তাঁর পিতা শ্রীমন্ত পাখিরা জীবিকা নির্বাহ করেন গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা দামোদর নদেতে মাছ ধরে। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে বেড়ে চলেছেন সনত। তার এই সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা এলাকার মানুষজন।

প্রত্যন্ত এ গ্রামে কেউ এত বড় সাফল্য পেতে পারে এটাই বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই!! মা, বাবা, দাদা এবং বৃদ্ধ ঠাকুমাকে নিয়ে সনতের সংসার। সনদ পরিবারের সকলের ছোট। বর্তমানে বাবার বয়স হয় তিনি বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন। তাই তিনি আগের মত কাজও করতে পারেন না। সেইজন্য এই অভাবের মধ্যেই বাড়ি থেকে বীর শিবপুর প্রায় ১০ কিমি রাস্তা প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে পড়েন কাজে। সেখানে একটি বিস্কুট কারখানায় লেবারের কাজ করেন সনত। কাজের শেষে বাড়ি ফিরতে রাত হয়। আবার পরের দিন সকালেই বেরিয়ে পড়তে হয় কাজে। না হয় যে পেট চলবে না! উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা সনত আর্থিক অনটনের জন্য আর বেশিদুর পড়াশোনা করতে পারেনি। তবে ছোটবেলা থেকেই যোগাসনের প্রতি অগাত ঝোঁক। বাড়ির কাছেই “বাড়বেড়িয়া চেতনা সৎসঙ্গ আশ্রমে” যোগা শেখা শুরু হয় সনতের।

প্রথম থেকেই যোগার প্রতি তার খুব আগ্রহ থাকায় প্রশিক্ষক সহ আশ্রমের কর্মকর্তাদের নজরে চলে আসেন সনত। এর আগে বেশ কয়েকবার ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরে পুরস্কার পেয়েছেন সনত। এছাড়া জাতীয় স্তরেও সাফল্য এসেছে। তবে ন্যাশনালে চ্যাম্পিয়ন এই প্রথমবার।

সনতের এই সাফল্যে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান সহ সকল স্তরের মানুষের মধ্যে খুশির হাওয়া। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে রাজস্থান থেকে নিজের বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় বীর শিবপুর রেল স্টেশনে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাকে দেখতে ভিড় জমান স্থানীয় মানুষজন। বীর শিবপুর রেল স্টেশন থেকে নিজের গ্রাম বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা সনতকে প্রশাসন করে নিয়ে আসেন বাড়বেড়িয়া চেতনা সৎসঙ্গ আশ্রমের সদস্যরা।

এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন আশ্রমেরই কর্ণধার তথা আশ্রমের সম্পাদক ডাক্তার গৌতম পাল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন শুভেচ্ছা ভরিয়ে দেন সনতকে। এই পথের মধ্যেই পড়ে হাটগাছা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাহেব ও অঞ্চল অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে সনতকে শুভেচ্ছা জানান। আশ্রমের সম্পাদক ডাক্তার গৌতম পাল থেকে শুরু করে এলাকার সকল মানুষই চান সনত যেন একটু সরকারি সাহায্য পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *