ভালোবাসার টানে যুদ্ধ ২২ বছরের!
ভালোবাসার টানে ২২ বছর একাই কাটেন আস্ত একটা পাহাড়। অভিশাপ চিরে তৈরি করেন ভালোবাসার রাস্তা।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/IMG_20240118_125232.jpg)
নিউস বাংলা লাইভ ডেস্ক: হ্যা ঠিকই শুনেছেন, অবিশ্বাস্য হলেও এ গল্প সত্যি।
এক ব্যক্তি যিনি কিনা ভালোবাসার টানে ভেঙেছিলেন আস্ত পাহাড়। ২২ বছর প্রকৃতির সাথে লড়েছিলেন একাই। কথায় বলে ভালোবাসা অন্ধ। হ্যাঁ, সত্যিই বোধহয় ভালবাসলে অন্ধের মতো লড়াই করা যায় যেকোনো পরিস্থিতির সাথে। যুগে যুগে এমন বহু নিদর্শন আমরা দেখে এসেছি আমাদেরই চারিপাশে। আজকের দিনেও যার একটি বিশ্ব বিখ্যাত নিদরন আগরায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা উঁচু করে। কিন্তু সে তো গেলো রাজ-রাজাদের কর্মকান্ড। যেখানে রাজা একা নয় তার সাথে সঙ্গ দেয় হাজার হাজার প্রজারাও। সকলের মিলিত প্রয়াসে অবশেষে বেগমের জন্য তৈরি হয় বিরাট প্রাসাদ।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/xdfhcfgjgh-1024x566-1.jpg)
এ এক অন্ধ ভালোবাসার জনপ্রিয় সত্য গল্প।ব্যক্তির নাম দশরথ মাঝি। যার তৈরি রাস্তা ‘দশরথ মাঝি রোড’ নামে পরিচিত। যা ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও জনপ্রিয়। তবে এই রাস্তা কিন্তু নিতান্তই বিনা কারণে তৈরি করেননি তিনি। এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক মর্মান্তিক কাহিনী।এই গল্পকথা সম্পূর্ণ ভিন্ন অন্য ভালোবাসার গল্পগুলির চেয়ে। কারন এই গল্পের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত লড়েছিলেন একা একজনই। স্ত্রী’র জন্য একাই কাটতে শুরু করেন আস্ত একটা পাহাড়। তৈরী করেন রাস্তা। সঙ্গ বলতে ছিলো কেবলি গায়ের জোর আর প্রবল মনোবল। কিন্তু কেনো এমন কান্ড! জানলে চমকে উঠবেন যে কেউ।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/yiyuiyui-1024x569-1.jpg)
আসলে বুকে চাপা কষ্টের পাথর চেপে পাহাড় কাটতে শুরু করেছিলেন দশরথ। ভারতের বিহার রাজ্যের গয়া জেলার মুহরা তহশিলের আতরি ব্লকে পিছিয়ে পড়া প্রত্যন্ত গ্রাম-গেহলৌর গ্রাম ও শহরের সংযোগস্থল বর্তমানে এই রোড। অতীতে এই দুটি গ্রামকে শহরের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলো মস্ত এক পাহাড়, তার নামও গেহলৌর ।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/1623933360_1623933355510.jpg.webp)
পাহাড় ঘুরে ওয়াজিরগঞ্জ যেতে গ্রামবাসীকে পাড়ি দিতে হতো প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পথ। এককালে গ্রামের উন্নয়নের পথে এক বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল গেহলৌর গ্রাম। সবচেয়ে কাছের হাসপাতালটির দূরত্বই প্রায় সত্তর কিলোমিটার। গরুর গাড়িতে করে মূমুর্ষু রোগীকে অল্প সময়ের মধ্যে কিছুতেই পৌঁছানো যেত না শহরে। অগোথ্যা কয়েক ঘন্টার মধ্যে যাত্রা পথেই মৃত্যু হতো রোগীর। গ্রামবাসী ফিরে আসত রোগীর মৃতদেহ নিয়ে।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/WhatsApp-Image-2019-06-21-at-8.57.05-PM.jpeg)
গ্রামের বাসিন্দা দাশু-ফাল্গুনির জীবনে আসে প্রেম। দু’জনে একদিন ঘর বাঁধে। জন্ম হয় সন্তানের। পুত্র ভগীরথ এবং কন্যা বাসন্তী। দিন মজুরের কাজ করতেন দশরথ। পাহাড় বেয়ে প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপের মত চলে যাওয়ার ক্ষমতা ছিলো তাঁর। উচ্চবর্ণদের ক্ষেতে কাজ করে আবার ফিরে আসতেন সন্ধ্যের মধ্যে।
দুপুরে আবার দশরথের খাবার ও জল পুঁটলিতে নিয়ে পাহাড় বেয়ে দিয়ে আসতেন ফাল্গুনি।হামেশাই স্ত্রী ফাল্গুনী ভয় প্রকাশ করতেন স্বামী দশরথের কাছে। বলতেন রাস্তা পেরোতে ভীষণ ভয় লাগতো তার। পায়ের তলা পাথর নড়ে যায় এই অসহংকাই তারা করে বেড়াতো সর্বদা। অনেক কষ্টে পৌঁছাতেন দশরথের কাছে। দশরথ অবশ্য রোজ আসতে মানা করতেন করতেন স্ত্রীকে। কিন্তু স্বামীর ক্ষুধা মেটাতে সমস্ত ভয় কাটিয়ে রোজই সে পথে এগিয়ে যেতেন ফাল্গুনী।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/a03bd120ee260601e2807672ab3aa96a7d2f3d2bc6f4629d.jpg)
ভাগ্যের পরিহাসে একদিন ঘটে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সত্যি হয় মনের ভয়। একদিন খাবার নিয়ে ফাল্গুনী আর পৌঁছান না স্বামীর কাছে। দেরি হচ্ছে দেখে এদিকে আশঙ্কায় বুক ছটফট করতে থাকে দশরথের। খবর মেলে পা পিছলে পড়েছেন ফাল্গুনী। তৎক্ষণাৎ তড়িঘড়ি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোলা হয় ফাল্গুনীর রক্তাক্ত দেহ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দীর্ঘ পথ অতিক্রমের আগেই মৃত্যু হয় তার।নিমেষেই এক দমকা বিপদে ছারখার হয়ে যায় দশরথ-ফাল্গুনীর সুখের সংসার। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভ দশরথ সমস্ত ঘটনার জন্য মনে মনে দায়ী করতে থাকেন ওই পিশাচ পাহাড়কে। মনে মনে স্থির করেন পাহাড় তিনি কাটবেনই। এ যেন ভালোবাসার টানে প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করা এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/DHtNK-mXoAER5nx.jpg)
তিনি স্থির করেন, যে পাহাড় তার বুক থেকে ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছে সেই পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করবেন রাস্তা। ঘোচাবেন দীর্ঘদিনের সমস্ত অভিশাপ। তবেই শান্তি পাবে ফাল্গুনের আত্মা।
যেমন কথা তেমনি কাজ। প্রথমে অবশ্য তিনি সাহায্যের জন্য যান অন্যান্য গ্রামবাসীদের কাছে। কোনও সাহায্যের হাত পেয়ে শেষে একাই নেমে পড়েন তিনি। এ কাজে কারোর বাধাই আটকাতে পারেননি দশরথকে। একদা গ্রামবাসীরা বলতে বউয়ের শোকে পাগল হয়ে গিয়েছেন তিনি। পাথর কাটার মেশিন ছিলোনা। ছিলোনা ডাইনামাইড। ঠাট্টা তামাশা করেন সকলে। কিন্তু দশরথ তাঁর সংকল্পে অটুট থাকেন ১৯৬০ সাল থেকে। হাতুড়ির এক একটা ঘা , এক একটা সংকল্পে ধীরে ধীরে কাটতেন পাহাড়। সে এক হাড় হিম করা চোখের জল আনা লড়াই।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/news_3636_1.jpg)
২২ বছর লড়াই করে অবশেষে অভিশাপ চিরে তৈরি করে ফেলেন উন্নয়নের রাস্তা। উলেক্ষ্য, ২০০৬ সালে পদ্মশ্রীর জন্য মনোনীত হয়েও দশরথ পাননি সম্মান।পরবর্তীকালে বিহার সরকার তাঁকে সম্মান জানিয়ে ৫ একর জমি দেন। তাঁর নামে গড়ে ওঠে হাসপাতাল।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/রকনুগককহগ.jpg)
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী, তবে অনেক পরে ঘর্মাক্ত মুখে সাংবাদিককে বলেছিলেন,”আমি আমার কাজের মাধ্যমে সবাইকে এ কথা বিশ্বাস করাতে চেয়েছি যখন ঈশ্বর আপনার সাথে থাকবেন কেউ আপনাকে থামাতে পারবে না। আমি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমার গ্রামের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবো। পদক বা পুরস্কারের লোভ আমার নেই। আর কোনও শাস্তিরও পরোয়া করি না আমি”।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/vbnvnn-1024x568-1.jpg)
২০০৭ সালের ১৭ ই অগাস্ট, ৭৩ বছর বয়সে পীত্তাশয়ের ক্যান্সারে প্রয়াত হন ‘মাউন্টেন ম্যান’ দশরথ মাঝি। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিহার সরকার তাঁর অন্ত্যেষ্টি করে। ভারতীয় ডাক বিভাগ ‘বিহারের ব্যক্তিত্ব’ সিরিজে দশরথ মাঝিকে নিয়ে একটি স্ট্যাম্প প্রকাশ করে ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে। দশরথ মাঝির তৈরি রাস্তাটির নাম দেওয়া হয় হয় নাম হয় ‘দশরথ মাঝি রোড’।
![](https://newsbanglalive.in/wp-content/uploads/2024/01/hgvhkkhjk-1.jpg)