শীর্ষ খবরহাওড়া

ব্যাঙ্ক থেকে উধাও লক্ষাধিক টাকা! সাইবার অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে জগৎবল্লভপুর

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া:সঞ্চয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এখন মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জগৎবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শিবতলা, দক্ষিণ খাঁড়া পাড়া, কালীতলা বাজার এলাকার বাসিন্দাদের। নিজেদের সঞ্চিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কারোর কুড়ি হাজার কারোর দশ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাওড়ার রাজ্য গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জগৎবল্লভপুর শাখার গ্রাহকেরা। ব্যাঙ্ক থেকে ফোন করছি বলে অ্যাকাউন্ট নম্বর সহ বিস্তারিত তথ্য গ্রাহকদের জানান হচ্ছে। এরপরই ওটিপি ফোনের অপর প্রান্তের লোকের সঙ্গে শেয়ার করলেই অ্যাকাউন্টথেকে উড়ে যাচ্ছে টাকা। শুধু তাই নয় গ্যাস সরবারহকারী অফিস থেকে ফোন করে কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনার ভর্তুকির টাকা ঢুকবে বলে অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ওটিপি দেওয়া মাত্র অ্যাকাউন্ট থেকে সম্পূর্ণ অর্থ তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ এর সঙ্গে ওই ব্যাঙ্কের কোনো কর্মচারী অবশ্যই যুক্ত আছেন। যে নম্বরগুলো থেকে ফোন আসছে টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার পর সেই নম্বরে ফোন করলে মিলছে উল্টো হুমকি। বলা হচ্ছে ‘যা খুশি করে নিতে’ এমনটাই অভিযোগ ওই এলাকার গ্রাহকদের। ঘটনার সূত্রপাত গত মাস থেকে। শিবতলা, দক্ষিণ খাঁ পাড়া, কালিতলা বাজার ছাড়াও আরও পার্শ্ববর্তী এলাকার গ্রাহকদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটছে বলেই জানা যাচ্ছে। রাজ্য গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখাতে অভিযোগ জানিয়েও সেভাবে কোনো সাহায্য পাওয়া যায় নি বলেই অভিযোগ গ্রাহকদের। পাশাপাশি জগৎবল্লভপুর থানা সহ গ্রামীণ হাওড়ার পুলিশ সুপারের অফিসে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও পুলিশ প্রশাসন শীতঘুমেই রয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।স্থানীয় বাসিন্দা ও জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গ্রাহক চৈতালি দাস অভিযোগ করেন তার জায়ের মোবাইলে ফোন আসে দিল্লি থেকে।গ্যাস সরবারহকারী সংস্থা থেকে বলছে বলে ওই ব্যক্তি। তাঁদের বলা হয় গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ আট হাজার টাকা দেওয়া হবে। তার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর চায়। এরপর তার জায়ের মোবাইলে মেসেজ পাঠায় ও সেই মেসেজের মধ্যে থাকা নম্বরটি চায়। সেটা দেওয়ার পর তার জায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয় বলেই জানান তিনি। শুধু তার জা একা নয় এরকম অনেক ব্যক্তির সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন তারা খেটে খাওয়া মানুষ। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে ওই টাকা জমিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের পুলিশ শাস্তি দিক এটাই তারা চাইছেন ও তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে চলে যাওয়া টাকা তারা ফেরত পেলে তাঁদের উপকার হবে বলেই জানান চৈতালি দাস।

এলাকার অপর এক বাসিন্দা বাচ্চু পাল সরাসরি অভিযোগ করেন এই ঘটনায় ব্যাঙ্কের কর্মচারী অবশ্যই যুক্ত আছেন। নাহলে গ্যাস অফিসের নামে ফোন করে অ্যাকাউন্ট সম্বন্ধিত সমস্ত তথ্য কি ভাবে জানিয়ে দিচ্ছে। তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকেও একইভাবে আট হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তারা থানাতেও অভিযোগ করেছেন। এখনও সেই টাকা ফেরত পান নি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা উল্টে জানিয়েছেন ওটিপি অচেনা ব্যক্তিকে দিয়ে দিলে তাঁদের কিছু করণীয় নেই। জগৎবল্লভপুর বিধানসভার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চলছে এই ধরণের সাইবার ক্রাইমের ঘটনা। যদিও একে রুখতে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে যে প্রচার ও সচেতনতা প্রয়োজন এখনও তা গড়ে ওঠে নি বলেই গ্রাহকদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন এভাবেই প্রতারণা করা হচ্ছে তাঁদের। যদিও এর থেকে সচেতন হয়ে পুলিশ-প্রশাসন কঠোর হাতে এই সাইবার ক্রাইম অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তার দিকেই তাকিয়ে আছেন জগৎবল্লভপুর এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *