তমলুকপূর্ব মেদিনীপুরশিক্ষাশীর্ষ খবর

দারিদ্র্যকে হারিয়ে মাধ্যমিকে প্রতিবন্ধী পাঁচ পড়ুয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক:জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। চোখের রেটিনার সমস্যায় দৃষ্টি হারানো প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আতান্তরে পড়েছিলেন দিনমজুরি করে সংসার চালানো বাবা পিন্টু মাল। বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কাকে পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক স্কুলের পরিবর্তে ভর্তি করা হয়েছিল তমলুকের নিমতৌড়ি দীনদয়াল প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়ে।

ব্রেইল পদ্ধতিতে ওই স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি শিখেছে প্রিয়ঙ্কা। গানের জন্য জেলা ও রাজ্যস্তরের পুরষ্কারও পেয়েছে। এবছর জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক দেবে প্রিয়াঙ্কা। প্রিয়ঙ্কার মতোই এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে তার সহপাঠী রিঙ্কু ঘোড়ই, সোমাত্রী ভৌমিক, সুস্মিতা ঘোড়াই ও সুমনা মাইতি। প্রিয়াঙ্কা, রিঙ্কু ও মুক ও বধির। পাঁচজনেই তমলুকের নিমতৌড়ির প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণি থেকে পড়াশোনা করছে। তাঁরা এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তমলুকের খামারচক হাইস্কুলের হয়ে। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু মাধ্যমিক। তমলুকের চনশ্বরপুর হাইস্কুল কেন্দ্রেন পরীক্ষা দেবে তারা। তাই এখন শেষপর্যায়ের প্রস্তুতিতে ভারী ব্যস্ত প্রিয়াঙ্কা, রিঙ্কু, সুস্মিতারা। তাঁদের সাহায্য করছেন শিক্ষিকা রমা মাইতি, প্রভাতী রাণা, লাবণি অধিকারী, রুমা জানা।

রিঙ্কুর বাড়ি তমলুক থানার বাড়খোদা গ্রামে। বাবা দিলীপ ঘোড়ই শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়িতে বাবা-মা ও ভাই রয়েছে। কাজ করেন। তবে দৃষ্টিহীন রিঙ্কু জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পড়াশোনাকেই আঁকড়ে ধরতে চায়। প্রিয়াঙ্কা ও রিঙ্কুর মতো আরেক দৃষ্টিহীন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার আমদা গ্রামের বাসিন্দা সোমাশ্রী পড়াশোনার সাথে গান- বাজনাও শিখেছে। সুস্মিতা ঘোড়ই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। মহিষাদল থানার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা সুস্মিতার বাবা শঙ্কর ঘোড়াই শ্রমিকের কাজ করেন। পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের হাল ধরতে চায় সুস্মিতা। নন্দকুমার থানার বেতকল্লা গ্রামের সুমনা মাইতিও শ্রবন প্রতিবন্ধী। বাবা পানের আড়তে কাজ করেন।

মাধ্যমিকের প্রস্তুতি কেমন হয়েছে জানাতে চাইলে প্রিয়াঙ্কা, রিঙ্কু দু’জনেই বলে, “যতটা সম্ভব ভাল ফল করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা খুবই সাহায্য করছেন। আশা করছি পরীক্ষা ভালো হবে।”

নিমতৌড়ির আবাসিক ওই স্কুলের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্বেছাসেবী সংস্থার সম্পাদক যোগেশ সামস্ত বলেন, “দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হীন এই পড়ুয়াদের আমাদের স্কুলে বিশেষ পদ্ধতিতে পড়াশোনা শেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ওদের প্রত্যেকের মধ্যে যে প্রতিভা রয়েছে তা বিকশিত হওয়ার জন্য গান-বাজনা, নৃত্য ও হাতের কাজ প্রভৃতি শেখানো হয়েছে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ওরা সকলেই খুবই উৎসাহিত রয়েছে। প্রত্যেকেই দরিদ্র পরিবারের। তবে দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়েই ওরা বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয়ী। আমরাও তাই আশা করছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *