মালদাশীর্ষ খবরহরিশ্চন্দ্রপুর

গ্রুপ সি চাকরি বাতিলের তালিকায় মালদা জেলার তৃণমূল নেতার দুই মেয়ে এবং জামাইয়ের নাম

নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা: নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডের ছায়া এবার মালদাতে। হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গেল তৃণমূল নেতার দুই মেয়ে এবং জামাইয়ের।সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই চাঞ্চল্য জেলা রাজনৈতিক মহলে। এলাকাবাসী এমনকি এলাকার তৃণমূল কর্মীদেরও দাবি মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছিল ওই তৃণমূল নেতার পরিবারের লোকেরা। কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূলকে খোঁচা বিজেপির।সাফাই জেলা তৃণমূলের। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায়ের ভিত্তিতে গ্রুপ সি পদে কর্মরত ৮৪২ জনের চাকরি গেছে। কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে তারা আর স্কুলে যেতে পারবে না।তাদের বেতনও বন্ধ হবে। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই তড়িঘড়ি সেই তালিকা প্রকাশ করে কমিশন।তালিকা সামনে আসতেই দেখা যায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতাদের পরিবারের লোকের নাম রয়েছে ওই তালিকায়।

এবার সেখানে সংযুক্তি হলো মালদা। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর রামপুর গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা প্রকাশ দাসের দুই মেয়ে মাম্পি দাস,শম্পা দাস এবং জামাই বিপ্লব দাসের চাকরি গেছে হাইকোর্টের রায়ে। মাম্পি দাস হরিশ্চন্দ্রপুর হাই স্কুল, শম্পা দাস হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয় এবং বিপ্লব দাস কনুয়া ভবানীপুর হাই স্কুলে ক্লার্ক পদে কর্মরত ছিলেন। ৮৪২ জনের যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেই তালিকায় রয়েছে তাদের নাম। এদিকে এই ঘটনা সামনে আসতেই খুশি এলাকাবাসী। কারণ তাদের দাবি শুধুমাত্র টাকার জোরে এবং তৃণমূল করার কারণে চাকরি পেয়ে গেছিল একই পরিবারের তিনজন। অথচ এলাকার প্রকৃত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী যারা তারা ঘুষ না দিতে পারায় চাকরি পায়নি। তাই হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সকলে।

এমনকি স্থানীয় এক মহিলা তৃণমূল কর্মীর দাবী ২৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এদের চাকরি হয়েছিল।সেই টাকা কাকে দিয়েছিল বা কাদের সুপারিশে হয়েছিল এই নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।যদিও সমগ্র ঘটনায় কোন মন্তব্য করতে চাইনি প্রকাশ দাস বা তার পরিবারের লোকেরা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে সরকার থেকে এই সংক্রান্ত এখনো কোনো কাগজ এসে পৌঁছায় নি। এদিকে সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য জেলা রাজনৈতিক মহলে।

বিজেপির দাবি এই দুর্নীতির জন্য মানুষ তৃণমূলকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। যদিও তৃণমূলের সাফাই দল দুর্নীতি-গ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে না। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো কাজ করবে।

উত্তর রামপুর গ্রামের স্থানীয় তৃণমূল কর্মী কলাবতী দাস বলেন, ভালো ভালো ছেলে মেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না। আর এরা টাকা দিয়ে চাকরি করে নিয়েছে। তৃণমূলের নাম ব্যবহার করে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। যেটা হয়েছে খুব ভালো হয়েছে।

উত্তর রামপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গুল মোহাম্মদ বলেন, প্রকাশ দাস তৃণমূল করে তাই টাকা দিয়ে নিজের মেয়ে জামাইয়ের চাকরি করে নিয়েছিল। এমনকি ওর ভাগ্নেরও চাকরি হয়েছিল সেটা আগেই বাতিল হয়েছে। হাইকোর্টের এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।

উত্তর রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন আমাদের এখানে অনেক ভালো ভালো ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। যাদের আর্থিক ক্ষমতা নেই ঘুষ দিতে পারেনি। তারা কেউ চাকরি পায়নি। আর এরা টাকার বিনিময়ে পেয়ে গেছিল।

কনুয়া ভবানীপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা চৌধুরী বলেন ডিআই অফিস থেকে এই ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য আসেনি। মিডিয়া মারফত ঘটনাটি শুনেছি।তাই এই নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।

উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, শিক্ষক থেকে শুরু করা অশিক্ষক কর্মী পুরো নিয়োগটাই দুর্নীতিগ্রস্ত। আজ তৃণমূলের যে নেতারা হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে বুঝতে হবে তারা কাটমানির ভাগ পায়নি। চাকরির প্রার্থীরা ৭০০ দিন ধরে আন্দোলন করছে। আর অযোগ্যরা টাকার বিনিময়ে চাকরি করছে। মানুষ এদের ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেবে।

মালদা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, বিচার ব্যবস্থাকে আমরা সম্মান করি। কেউ যদি বেআইনি ভাবে বেনিয়ম করে কিছু পায় দল সেটার দায়িত্ব নেবে না। কোর্ট যে ভাবে রায় দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো সেই ভাবেই পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিরোধীদের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।

প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এই মুহূর্তে তোলপাড় সারা রাজ্য।একের পর এক শিক্ষক থেকে শুরু করে অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি যাচ্ছে কোর্টের রায়ে।দেখা যাচ্ছে ফাঁকা ওএমআর শিট দিয়ে অনেকে পেয়ে গেছেন চাকরি। রাজ্যের প্রত্যেকটি প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে এই দুর্নীতির জাল।মালদাও তার ব্যতিক্রম নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *