জেলামালদারাজনীতি

গোষ্ঠী দ্বন্দের মুখে ঘাসফুল শিবির! বেকায়দায় বেরিয়ে এলো লুকায়িত অস্ত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা:পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মালদার হবিবপুরে গোষ্ঠী দ্বন্দে জেরবার রাজ্যের শাসক দল ঘাসফুল শিবির। হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতিকে নিয়ে এতদিন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীদের চলছিল চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব। কী করা যায় তা নিয়ে সভাপতি প্রদীপ বাস্কের বিরুদ্ধে চলছিল গোপন শলা পরামর্শ। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ক্ষোভের আগুনে ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে শান দিচ্ছিলেন অস্ত্রে। রবিবার বিক্ষুব্ধদের খাপ থেকে বেরিয়ে পড়ল সেই অস্ত্র। হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ বাস্কের বিরুদ্ধে দলবিরোধী নানা অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারন দাবি করে বিক্ষোভ সভা করলেন হবিবপুর রাইস মিল মাঠ এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার জেরে চরম অসস্তিতে পড়েছে দল।

প্রসঙ্গত,আগামী ডিসেম্বরের ৪ তারিখে মালদায় তৃণমূলের সরকারি কর্মীদের মহামিছিল সফল করতে যখন হবিবপুরের রাইস মিল হাটে একটি হলঘরে সভা করছেন হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি। সেই সময়ই মাত্র একশ মিটার দুরে ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজস সহ স্থানীয় নেতা কর্মীদের যোগ্য মর্যাদা না দেওয়া এবং অন্যান্য বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারনের দাবিতে খোলা মাঠে বিক্ষোভ সভা করলেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা কর্মীরা। যদিও এমন বিক্ষোভ সভার কথা জানা নেই বলে জানিয়েছেন হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ বাস্কে। ঘটনায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মালদার হবিবপুরে গোষ্ঠী দ্বন্দ প্রকাশ্যে এলো বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, রাজ্যের শাসক দল ঘাসফুল শিবিরের এমন গোষ্ঠী দ্বন্দ প্রকাশ্যে আসার পেছনে মূলত সম্প্রতি তৃণমূলের প্রকাশিত হবিবপুর ব্লক কমিটিতে অনেক পুরনো নেতৃত্বদের বাদ পড়া। যা নিয়েই এই ক্ষোভের সূচনা। রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে এমন কোন্দল দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি গেরুয়া শিবির এখনই কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও নজর রাখছে ঘটনার দিকে।

দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে কেন এত ক্ষোভ? জানতে চাইলে হবিবপুর ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সহ সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র পান্ডে বলেন,” সম্প্রতি তৃণমূলের হবিবপুর ব্লক কমিটির তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে সেই তালিকায় তাঁর মতো অনেক পুরানো এবং সক্রিয় ও যোগ্য নেতৃত্বদের নামই নেই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আবার পদ থেকে নামিয়ে শুধু মাত্র সদস্য করে অমর্যাদা করা হয়েছে। এই নিয়ে হবিবপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকার যোগ্য ও পুরানো নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাই রবিবার হবিবপুরের রাইস মিল হাটের মাঠে সভা করলেন বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা। কারণ এর পেছনে চক্রান্ত রয়েছে বর্তমান ব্লক সভাপতির। বিজেপির হাত শক্ত করতে ব্লক সভাপতি শুধু বিজেপির সঙ্গে যোগসাজসই করেননি। বিজেপিকে খুশি রাখতে ইচ্ছে মতো ব্লক কমিটিও গঠন করেছেন। তাই দলের তাঁরা ব্লক সভাপতি প্রদীপ বাস্কের অপসারনের দাবিতে এই বিক্ষোভ সভা করলেন।” এদিকে হবিবপুর ব্লক তৃণমূলের এক্সিকিউটিভ সদস্য দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ও একই অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ” আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই ইচ্ছে মতো পুরোনো যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। দলের অস্তিত্ব বাঁচাতে শীঘ্রই ব্লক সভাপতি প্রদীপ বাস্কের অপসারন চাই।” বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি দিপঙ্কর মন্ডল। তিনি বলেন, ” আমি গত ১১ বছর হবিবপুর ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলাম। বাম- বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে অনেক কষ্ট করে সংগঠনটাকে তৈরি করা হয়েছে। এখন বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রদীপ বাস্কে তৃণমূল দলটাকে বিজেপির হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছেন। সেই সুবিধা করতে দলের যোগ্য ও পুরানো নেতাদের কাউকে বাদ দিয়ে, কাউকে যোগ্য পদ না দিয়ে খেয়াল খুশি মতো কমিটি গঠন করেছেন। তাই হবিবপুরে তৃণমূল বাঁচাতে ব্লক সভাপতির অপসারন চেয়ে এই বিক্ষোভ সভা।”

বিক্ষোভ সভায় ব্লক তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন হবিবপুর আদিবাসী ব্লক তৃণমূল সভাপতি কিষ্ট মুর্মু। তিনি আক্রমনাত্মক ভাষায় বলেন,” হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ বাস্কে বিজেপির দালালি করছেন। বিজেপি থেকে এসে দলের দায়িত্ব পেয়ে এখন দলটাকে বিজেপির মুনাফার জন্য যা খুশি করছেন। দলের কর্মীদের সম্মান দিচ্ছেন না। পুরানো নেতাদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের সাজানো বাগানটাকে শেষ করে দিতে চাইছেন। কিন্তু তাঁরা কিছতেই সেটা হতে দিবেন না। তাই এদিন বিক্ষোভ সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই জেলা সভাপতির উদ্যেশ্যে পদত্যাগ পত্র লিখেছেন। তাঁরা দাবি তুলেছেন হবিবপুরে তৃণমূলকে বাঁচাতে অবিলম্বে ব্লক সভাপতিকে অপসারণ করতে হবে। অপসারন না পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।” এদিকে হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ বাস্কেকে এদিনের বিক্ষোভ সভা এবং তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়। তিনি বলেন,” আমি হবিবপুর রাইস মিল হাট এলাকায় একটি সভা করছিলাম বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে ৪ ডিসেম্বর মালদায় একটি মহামিছিল ও সমাবেশ সফল করার বিষয়ে। কোথায় বিক্ষোভ সভা হয়েছে জানা নেই। আর এই বিষয়ে আমার বলারও কিছু নেই।”

এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের মতে, গোষ্ঠী দ্বন্দের এমন ঘটনায় দল যে অসস্তিতে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই বিক্ষোভ সামাল দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *