এগরাপূর্ব মেদিনীপুর

এগরা বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে, পুলিশি তদন্তে আস্থা নেই।

পূর্ব মেদিনীপুর : এগরা বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে পুলিশি তদন্তে আস্থা নেই। সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন গুরুতর জখম শেখ রাইজুদ্দিনের মেজো দাদা শেখ করিম। তিনি জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ এলাকায় দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। বর্তনায় কৌটো বোমা ফেটে আমার ভাইয়ের একটা হাত ও একটা চোখ চলে গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কীভাবে সুস্থ অবস্থায় থাকবো তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।

সোমবার রাতে এগরার থানার বর্তনায় বরিদা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সিদ্ধেশ্বর বেরা’কে সঙ্গে নিয়ে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে এলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তরুণ কুমার মাইতি। তিনি গোটা বিস্ফোরণস্থল সরজমিন ঘুরে দেখেন। বিধায়ককে কাছে পেয়েই কার্যত কান্নায় ভেঙে পড়ল রাইজুদ্দিনের পরিবারের লোকজনেরা। সেইসঙ্গে বিধায়কের কাছে গিয়েই সিবিআই তদন্তের দাবি করল রাইজুদ্দিনের পরিবারের সদস্যেরা। তবে স্থানীয় এলাকার বিধায়ক তরুণ কুমার মাইতি জানিয়েছেন, ঐ পরিবারকে সরকারিভাবে সব রকম সাহায্য করা হবে। কলকাতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। সমস্ত রকম চিকিৎসা পরিষেবা যাতে আহত ব্যক্তি পায় সে বিষয়ে সরকার নজরে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুবমোর্চার ইনচার্জ অরুপ দাশ জানিয়েছেন, এগরা একটা বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে কোন মূহুর্তে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েকমাস আগে খাদিকুলে বোমা বিস্ফোরণে কতগুলো মানুষের প্রাণ গেছে। এই ঘটনায় এন আই এ কিংবা সিবিআই তদন্ত হোক বলে দাবি অরুপ দাশের। প্রসঙ্গত, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কৌটো বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল এক শ্রমিকের হাত। বোমার স্লিন্টার লেগে গুরুতর জখম হয়েছে একটি চোখ। রবিবার বেলার দিকে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে এগরা থানার বরিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তনা গ্রামে। গুরুতর জখম শেখ রাইজুদ্দীন (৫৫)কে তড়িঘড়ি এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে যায় এগরা থানার পুলিশ। কোথা থেকে ওই কৌটো বোমা এল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ রাইজুদ্দিন রাস্তার পাশে বাঁশের বেড়া দিচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তার পাশে একটি টিনের কৌটো পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সেটিকে হাতে তুলে সরিয়ে রাখতে গিয়েই বিকট শব্দে টিনের কৌটোটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দে চারিদিক থেকে লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। ততক্ষণে বিস্ফোরণের জেরে রাইজুদ্দিনের ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাম চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। স্থানীয়রাই রক্তাক্ত মইজুদ্দিনকে দ্রুত উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কাতারে কাতারে গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে এর প্রতিবাদ জানান।

জখম রাইজুদ্দিনের প্রতিবেশী সেক আজাহার জানান, “আচমকা বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েই আমরা ছুটে আসি। এসেই দেখি রাইজুদ্দিন রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে আছে। তবে কিভাবে এই বিস্ফোরণ বা কোথা থেকে এই বোমা এসেছে তা আমরা বুঝতেই পারিনি”। আজাহার জানান, “রাইজুদ্দিন একজন খেটে খাওয়া মানুষ। তাঁর এমন কোনও শত্রু থাকার বিষয়ে জানা নেই। তার বাড়ির কাছে এভাবে কে বোমা রেখে গেল তা নিয়েই ধোঁয়াশা ছড়াচ্ছে”। স্থানীয় বরিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিদ্ধেশ্বর বেরা জানান, “ওই ব্যক্তি নিজের বাড়ির সামনে বেড়া দেওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। বিস্ফোরণে তাঁর একটি হাত উড়ে গিয়েছে। এই এলাকায় আগে কখনও এমন ধরণের ঘটনা ঘটেনি। তাই কোথা থেকে ওই কৌটোয় বোমা এল তা স্পষ্ট নয়”। তিনি জানান, “ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে তা পুলিশকে খতিয়ে দেখতে বলেছি। তবে ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই” বলেই দাবী করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *